| ভারতে অনলাইন ক্রেতাদের সুরক্ষার জন্য ক্রেতা সুরক্ষা আইন | Ecommerce Laws in India in Bengali | Latest Consumer laws in Bengali

 



বিভিন্ন ই-কমার্স বা অনলাইন প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে আপনি কেনাবেচা করেন ? অনেক ক্ষেত্রেই আমরা অভিযোগ পাই যে, অনলাইনে যে জিনিস কেনার অর্ডার করা হয়েছে সেই জিনিসটা বা সেই কোয়ালিটির জিনিসটা সরবরাহ করা হয়নি বা একটি মূল্যবান প্রোডাক্ট অনেক টাকা দিয়ে অর্ডার করা সত্ত্বেও প্যাকেট খুলে কিছু ইটের টুকরো পাওয়া গেছে এরকম গল্প শোনা যায় | statista.com/ অনুযায়ী ভারতবর্ষ হলো পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন বাজার এবং 2022-এ গিয়ে ভারতবর্ষের প্রস্তাবিত অনলাইন বাজার 73 বিলিয়ান আমেরিকান ডলারের কাছাকাছি ছুয়ে যাবে |

এই অবস্থায় নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য বা নিজেদের অধিকার জানার জন্য সর্বশেষ উপভোক্তা বিষয়ক আইন সম্বন্ধে আপনাদের কিছু ধারণা বা জ্ঞান থাকা দরকার |

বর্তমানে, অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মতো ভারতে ক্রেতাদের বড় অংশ সাইবার ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে পণ্য বা পরিষেবা ক্রয় বা লাভ করছে বা ক্রয়ের চেষ্টা করছে I এই কারণে ই-কমার্স শিল্প গত কয়েক বছরে সেরা উন্নতি করেছে I বিশেষত, বর্তমানে এই দীর্ঘায়িত লকডাউনের পরিস্থিতিতে যখন সভ্যতার অস্তিত্বের পরীক্ষা চলছে, লোকেরা খুব সহজেই বাড়ী থেকে বের হতে পারছে না অথবা সরাসরি বাজার থেকে ক্রয় করা এড়িয়ে চলছে, ই-বাণিজ্য ব্যবসাটি শীর্ষে পৌঁছেছে । 

আমাদের সমাজের একটি বৃহত্তর অংশ সরাসরি ই-বাণিজ্য সত্তা বা ই-বাণিজ্য সত্তার মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বা পরিষেবা ক্রয় করছেন । প্রতিদিন বেশিরভাগ চুক্তি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের (অপার্থিব বিশ্ব) মাধ্যমে তৈরি হয় যেখানে বৈধ চুক্তির কিছু বা প্রতিটি অংশ ভার্চুয়াল বিশ্বের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। যদিও, পূর্ববর্তী ক্রেতা সুরক্ষা আইন, 1986 এবং আমাদের বিদ্যমান চুক্তি আইন (Contract Act), ভার্চুয়াল বিশ্বে সংঘটিত কোনও অনলাইন চুক্তি সম্পর্কিত বিরোধকে আইনত বিচার করার কোনও সুযোগ দেয় না | যদিও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের নিম্নলিখিত বিধানটি কিছুটা হলেও পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করে -

ধারা 10এ : ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সৃষ্ট চুক্তির যৌক্তিকতা – কোন চুক্তি তৈরি হবার সময় প্রস্তাব পাঠানোর, মেনে নেওয়ার ও বাতিল করার ক্ষেত্রে, যখন যেমন হবে, যদি তা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তবে সে ক্ষেত্রে এই চুক্তি শুধুমাত্র এই কাজের জন্য ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছে বলে অকার্যকরী বলে ধরে নেওয়া হবে না।

তবুও, আমাদের সাইবার বিশ্বে লেনদেনের বিপজ্জনক কার্যগুলি মোকাবিলার বা সঠিক বিচারের জন্য আমাদের একটি সম্পূর্ণ এবং উপযুক্ত আইন দরকার, যেখানে ক্রেতারা আসল বিশ্বের চেয়ে বেশি ঝুঁকিগ্রস্থ ভার্চুয়াল বিশ্বের পণ্য বিক্রেতা বা পরিষেবা সরবরাহকারীদের সাথে যোগাযোগ করে এবং যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পণ্য বিক্রি করার নাম করে ক্রেতাদের ঠকানোর জন্য প্রস্তুত I এই অজ্ঞাত বিশ্বে দায়বদ্ধকারীর ঠিকানা, ব্যবসায়ের জায়গা ইত্যাদি নির্ধারণ করা আরও কঠিন যেখানে সবটাই একেবারে ভার্চুয়াল (অপার্থিব) ।

এই পরিস্থিতিতে একটি সুগঠিত এবং সুরক্ষিত আইন দরকার যা উপরের সমস্যাটির সমাধান করবে | সম্প্রতিকালে আমরা নিম্নলিখিত দুটি যুগান্তকারী আইন পেয়েছি যা প্রতিদিনের মানুষের অনলাইন কেনাবেচার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে –

(1) ক্রেতা সুরক্ষা আইন, 2019 |

(2) ক্রেতা সুরক্ষা (ই-বাণিজ্য) বিধি, 2020 |(1) ক্রেতা সুরক্ষা আইন, 2019 (Consumer Protection Act, 2019) এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিচে ব্যাখ্যা করা হল :

1) নতুন আইনে ক্রেতা/ কনজিউমার (Consumer) এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে যে কনজিউমার হল সেই ব্যক্তি যে অনলাইন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এবং অফলাইন মাধ্যমে কোন কোন বস্তু ক্রয় করে বা কোনো পরিসেবা গ্রহণ করে | এর অর্থ, বর্তমান আইনে সমস্ত রকম ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে অনলাইন-কেনাবেচা কে অন্তর্ভুক্ত করা হলো |
 
2) এই আইনে ই-কমার্স এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে যে ই-কমার্স হলো দ্রব্য সামগ্রী কেনা বা কোনো পরিসেবা গ্রহণ করা যাতে ডিজিটাল দ্রব্য সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত এবং যা ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক্স নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংঘটিত হয় |
 
3) এই নতুন আইনের ধারা নম্বর 17 তে কর্তৃপক্ষের কাছে যে অভিযোগ করার কথা বলা হয়েছে তাতে কনজিউমার এর অধিকার ভঙ্গ করা বা অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য করা বা মিথ্যা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা যা গ্রাহকের স্বার্থ বিরোধী, সে ক্ষেত্রে ডিসট্রিক্ট কালেক্টর (District Collector) অথবা উপযুক্ত আধিকারিকের কাছে অভিযোগ দেওয়ার সময় লিখিতভাবে অথবা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়া যাবে |

4) এই আইনের ধারা 35 তে জেলা কমিশনের কাছে যে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে সেই অভিযোগ অন্যান্য মাধ্যমে এবং ইলেকট্রনিক মাধ্যমেও পেশ করা যাবে |

5) এই নতুন আইনে সমস্ত রকমের নোটিশ যা জেলা কমিশন অনুমোদিত যখন যেরকম পাঠানোর দরকার হবে তা আগের মত পদ্ধতিতে বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পাঠানো যাবে | অনলাইন নোটিশ, এক্ষেত্রে নোটিশটি ইলেকট্রনিক সার্ভিস প্রোভাইডারকে পাঠানো হবে যে একজন নোডাল এর মাধ্যমে এই পদ্ধতিটা সম্পন্ন করবে |

6) এই আইনের 94 তম ধারায় ই-কমার্স এর মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মে অসাধু কার্যবিধি বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে | এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে ই-কমার্স প্লাটফর্মে অসাধু চক্র বন্ধ করার জন্য কনজিউমার প্রোটেকশন রুল কি হবে তার ওপরে একটি বিস্তারিত রুল বা বিধি যথা ক্রেতা সুরক্ষা (ই-বাণিজ্য) বিধি, 2020 আনা হয়েছে যা আমি নিচে আলোচনা করলাম | অর্থাৎ সদ্য পাস হওয়া উপভোক্তা সুরক্ষা আইনের উপরোক্ত বিধানের মধ্যে, ভার্চুয়াল বিশ্বে ক্রেতা দ্বারা লেনদেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এই আইনটি অনলাইন বিশ্বের ব্যবসায়িক উপভোক্তাদের সুরক্ষার জন্যও।
 
(২) ক্রেতা সুরক্ষা (ই-বাণিজ্য) বিধি, 2020:
এই রুলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধি নিচে বর্ণনা করা হলো –

i) এই ই-বাণিজ্য বিধি, সর্বত্র সমস্ত রকম দ্রব্যসামগ্রী বা কেনা বেচার ক্ষেত্রে যা ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে, তা অন্তর্ভুক্ত হবে |

ii) অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে যত রকমের অসাধু ব্যবসা বাণিজ্য চলছে তা এই ই-বাণিজ্য বিধির অন্তর্ভুক্ত হবে |

iii) সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ধারাটি হলো, ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত নয় অথচ ভারতবর্ষে কোন দ্রব্য সামগ্রিক বা পরিসেবা প্রদান করে সেই সমস্ত ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর ওপরেও এই বিধি লাগু হবে |

iv) ই-কমার্স সংস্থাগুলির বিশদ বিবরণ স্থির করতে, বিধি নম্বর 4 অত্যন্ত প্রগতিশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধি |

v) এই রুল অনুযায়ী প্রতিটি ই-কমার্স কোম্পানিকে তাদের প্লাটফর্মে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো প্রকাশ করতে হবে, যেমন
1) ই-কমার্স কোম্পানির আইনি নাম |
2) ই-কমার্স কোম্পানির ভৌগলিক অর্থাৎ কোম্পানির হেডকোয়ার্টারের এবং সমস্ত ব্রাঞ্চের ঠিকানা |
3) কোম্পানির ওয়েবসাইট এর নাম এবং তার বিস্তারিত তথ্য |

vi) কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির আধিকারিক বা অফিসারের বিস্তারিত তথ্য যেমন তাদের ইমেইল অ্যাড্রেস, ফ্যাক্স নাম্বার, ল্যান্ডলাইন বা মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে |

vii) ই-কমার্স কোম্পানির ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি আইনের 79 ধারার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কারণ অনেক ক্ষেত্রে ই-কমার্স কোম্পানিগুলি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের 79 ধারা উল্লেখ করে তাদের দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করে এবং সেক্ষেত্রে কোন উপভোক্তা আইন এতদিন না থাকায় ই-কমার্স এর মাধ্যমে অসাধু চক্র বেড়েই চলেছে এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া বেশ কঠিন ছিল |

viii) কোনও বিক্রয়কারী ই-কমার্স সত্তার মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিক্রিত কোনও পণ্য বা পরিষেবাদি ফেরত নিতে অস্বীকার করবে না অথবা আমাদের কেনা বা কিনতে রাজি হওয়া এমন কোন পণ্য বা পরিষেবাগুলি সরবরাহ করার দায়িত্ব প্রত্যাহার করবে না অথবা অর্থ প্রদান করে ক্রয় করা কোন পণ্য বা পরিষেবা
যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় অথবা বিজ্ঞাপন সম্মত বৈশিষ্ট্যযুক্ত না হয় সেক্ষেত্রে বিক্রয়কারী বা পরিষেবা প্রদানকারী সেই অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকার করবে না I এমনকি যদি কোন পণ্য বা পরিষেবা নির্দিষ্ট সময়ের পর সরবরাহ করা হয় সেক্ষেত্রে বিক্রয়কারী বা পরিষেবা প্রদানকারী সেই অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে I প্রকাশ থাকে যে, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোন পণ্য বা পরিষেবা নির্দিষ্ট সময়ের পর সরবরাহ করা হয় সেক্ষেত্রে, এই উপ-বিধি প্রয়োগ করা হবে না I

ix) এই বিধিটি নিম্নলিখিত উপায়ে প্ল্যাটফর্মগুলিকেও পৃথক করে –
(i) ই-বাণিজ্য সত্তা এবং
(ii) মার্কেট প্লেস ই-কমার্স সত্তা

x) ছয় নম্বর বিধিতে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রেতাদের দায়-দায়িত্ব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন বিধিগুলি কি ভাবে প্রয়োগ হবে সেক্ষেত্রে বিধি আট-এ বলা হয়েছে যে, কেউ যদি এই বিধির কোন ধারা অমান্য করে তাহলে সে ক্ষেত্রে কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট 2019 অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বা কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট 2019 প্রযোজ্য হবে |

আমার দৃষ্টিতে উপরের আইনটি যদিও ই-বাণিজ্য শিল্পের (E-Commerce) ক্রিয়াকলাপগুলির বিচার সংক্রান্ত একটি সম্পূর্ণ কোড নয় তবে এতে ভারতের অনলাইন ক্রেতাদের পক্ষে অবশ্যই একটি সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে |

উপভোক্তা বিষয়ক বা উপভোক্তা সুরক্ষা আইন 2019 এবং ই-কমার্স উপভোক্তা সুরক্ষা বিধি, 2020 বিশদভাবে জানতে গেলে এ বিষয়ে একটি মোবাইল অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে যার লিংক নিচে প্রদান করা হলো, আপনারা বিস্তারিত পড়তে পারেন  :
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.something.consumer


[ দয়া করে এটি মনে রাখবেন, এই ব্লগ পোস্টটিকে আইনী মতামত হিসাবে গ্রহণ করবেন না এবং এই পোস্টটি কেবল মানুষকে সচেতন করার জন্য লেখা। ক্রেতা সুরক্ষা আইন, 2019, ক্রেতা সুরক্ষা (ই-বাণিজ্য) বিধি, 2020, এবং সম্পর্কিত বিধিগুলি দয়া করে পড়ুন। ]



Comments

  1. Thanks for your important information regarding online shopping and consumer protection law.
    Dr N C GHATAK

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks....do share with others for general awareness

      Delete
  2. Thank You for providing us with this useful information :)

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

65B Certificate Format | Certificate u/s 65B Indian evidence act

Whether Certificate u/s 65B of Indian Evidence Act mandatory? Latest Judgement on Electronic Evidence Law In India