আগামী দিনে কি রোবট বিচার করবে ? [Artificial Intelligence & Judiciary in Bangla]

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ?:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল একটি মেশিনকে এমনভাবে আচরণ করতে দেওয়া যাতে যে কোনও মানুষ যদি এমনভাবে আচরণ করে তবে এটিকে বুদ্ধিমান বলা হবে | ১৯৫৬ সালে জন ম্যাকার্থি, "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" বা Artificial Intelligence বা A.I. শব্দটি আবিষ্কার করেছিলেন I মানবিক বুদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল বিমূর্তভাবে, যৌক্তিকভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে যুক্তির সাথে সম্পর্কিত হওয়া, আবিষ্কার করা, স্থাপন করা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দেখা, সমস্যাগুলি সমাধান করা, বিদ্যমান জ্ঞানের সাথে আপাতদৃষ্টিতে বিশৃঙ্খল উপাদানগুলির নিয়মগুলি আবিষ্কার করা, নতুন কার্যগুলি সমাধান করা, নতুন পরিস্থিতিতে নমনীয়ভাবে মানিয়ে নেওয়া এবং স্বাধীনভাবে শেখার ক্ষমতা I

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ করার জন্য কী দরকার ?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর প্রচুর তথ্য দরকার কাজ করার জন্য। ডিজিটাল সহকারী সিরির (Siri) যা I-phone এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তার অন্যতম স্রষ্টা লুস জুলিয়ার কথায়, যদি একটি মেশিন ৯৫% নিশ্চিত করে একটি বিড়ালকে চিনতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে প্রায় ১00,000 বিড়ালের চিত্রের সংরক্ষন প্রয়োজন I

পৃথিবীজুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রয়োগ এবং প্রভাব:

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের বর্তমান সভ্যতার এবং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে চলেছে এবং আপনাদেরকে আরও বেশি করে প্রভাবিত করবে বলে মনে আশা জাগিয়েছে | মেশিন লার্নিং থেকে যাত্রা শুরু করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন ডিপ লার্নিং এর ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের ক্ষমতা বুদ্ধিমত্তাকে ছুঁয়ে ফেলবে বলে সাহস দেখাচ্ছে| পৃথিবীজুড়ে বিশেষত উন্নত দেশগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বা সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা অন্যান্য ক্ষেত্রের মত বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ও অনেকদিন থেকেই শুরু হয়ে গেছে এবং এ প্রসঙ্গে আমেরিকার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম বা ব্যবস্থা, কম্পাস (COMPASS) বা [Correctional Offender Management Profiling for Alternative Sanctions] পৃথিবীজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে | অপরাধ করার ক্ষেত্রে বর্ণ বৈষম্য কি আদৌ একটা কার্যকরী উপাদান সে ব্যাপারে এই কম্পাস পৃথিবীজুড়ে এক বিরাট বিতর্ক তৈরি করে দিয়েছে এবং রোবটের হাতে বিচারব্যবস্থা ছেড়ে দিলে আগামী দিনে কি ভয়ঙ্কর সামাজিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তার একটা পূর্বাভাস আমরা পেয়ে যাচ্ছি | ন্যায়বিচার পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষত মেশিন লার্নিং কিভাবে ব্যবহার হতে পারে তা দেখা যাক |

আদালত এবং তথ্য প্রযুক্তি –

ন্যায়বিচার পরিচালনার স্বতন্ত্র ক্ষেত্রে বিচার প্রদান করা এবং বিস্তৃতভাবে সমাজের কাছে মানদণ্ড উপস্থাপনে বিচার ব্যবস্থার যথেস্ট কার্যকারিতা রয়েছে I তবে বিষয় নির্বিশেষে আদালত ও বিচারকদের কাজ তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা | বাদী-বিবাদি আদালতে যে তথ্য আনে, প্রক্রিয়া চলাকালীন সেই তথ্যের রূপান্তর ঘটে এবং যা ফলাফল হয় সেটিও তথ্য | এই সমস্ত তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ জটিল কাস্টমাইজেশন নয় I ডিফল্ট রায় এবং অগ্রহণযোগ্য বিবৃতিগুলি প্রায়শই উৎপন্ন হয় | অনেক ক্ষেত্রে শুনানি ছাড়া একটি সাধারণ মূল্যায়নের প্রয়োজন হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে নিষ্পত্তি হয় | বিচার বিভাগীয় মামলার মোকাবিলায়, তাই তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে | রুটিন কেসগুলির মধ্যে তুলনামূলকভাবে একটি বৃহত অংশের অনুমানযোগ্য ফলাফল রয়েছে | এই ক্ষেত্রে, আদালতের রায় হ'ল সরবরাহকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি বৃহত স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াতে উৎপন্ন একটি নথি| এখানে, আদালত প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল নথি গ্রহণ করে যাতে ফাইলিং পার্টি ডিজিটালভাবে ডেটা সরবরাহ করে, যাতে তাদের ম্যানুয়ালি পুনরায় প্রবেশ করতে না হয় I তদতিরিক্ত, যদি ফলাফলটি অনুমানযোগ্য হয় তবে কেস প্রসেসিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আংশিক বা এমনকি বৃহত আকারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে, কারণ অবশ্যই ফলাফলটি মূলত বা সম্পূর্ণ নিশ্চিত|এমনকি একটি স্মার্ট ফাইলিং পোর্টাল বাদী-বিবাদি গুলিকে সর্বোত্তম উপায়ে তাদের মামলা আদালতে আনতে সহায়তা করতে পারে । একটি ডিজিটাল কেস ফাইল যা সহজগম্য পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে তথ্য উপস্থাপন করতে পারে । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই তথ্যগুলির ওপর বিভিন্নভাবে ব্যবহার হতে পারে ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আদালতের জন্য কী করতে পারে ?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence or A.I.) প্রযুক্তির ব্যবহার অগ্রগতির সাথে সাথে বিচার বিভাগগুলির মধ্যে মানবাধিকার, নজরদারি এবং দায়বদ্ধতার ওপর যথেস্ট প্রভাব সম্পর্কে আইনী প্রশ্নে জড়িত রয়েছে I কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্যতা ইতিমধ্যে অনেক বিচার বিভাগের দ্বারা অনুসন্ধান করা হয়েছে যার মধ্যে বিচার বিভাগ, প্রসিকিউশন সার্ভিসেস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিচার বিভাগীয় সংস্থা জুড়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধমূলক বিচারের জন্য, অনুসন্ধানী সহায়তা প্রদান করার জন্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলি স্বয়ংক্রিয়তা প্রদান করার জন্য ।এখন প্রশ্ন হলো কৃত্রিম বুদ্ধি কীভাবে আদালত এবং বিচারকদের জন্য কার্যকর হতে পারে ? এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দরকারী করতে কি প্রয়োজন ?

বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা মেটাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভিন্ন উপায়ে কার্যকর হতে পারে –

• তথ্য সংগঠিত করা - পাঠ্য নথি এবং ফাইলগুলিতে নিদর্শনগুলি সনাক্ত করার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে যা ম্যানুয়াল ফাইল গবেষণার চেয়ে দ্রুত এবং আরও নির্ভুল ।
• পরামর্শ - পরামর্শদানে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আদালতে মামলায় সম্ভাব্য পক্ষের জন্য কার্যকর হতে পারে, যারা তাদের সমস্যার সমাধান খুঁজছেন । “পরামর্শদাতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” আইনজীবি পেশাদারদের জন্যও কার্যকর হতে পারে ।
• ভবিষ্যদ্বাণী - আদালত সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম বলে দাবি করে এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা "ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ন্যায়বিচার" পৃথিবীজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে |
• মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিষেবা এবং প্রয়োগকরণ গোপনীয়তা এবং ন্যায্য বিচারের মতো মৌলিক অধিকারের সাথে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করে ।
• তথ্য সুরক্ষা - আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথ্যের সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে |
• স্বচ্ছতা - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথ্যের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে|

আদালতের কেসগুলি সর্বদা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জটিল, কাস্টম-তৈরি পদ্ধতির প্রয়োজন হয় না এবং কিছু ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রক্রিয়া করা যায় । এজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ সব ক্ষেত্রে এক নয়।ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ক্ষেত্রে নিচের প্রশ্নগুলো এই মুহূর্তে বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে :

• কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোন রূপটি ইতিমধ্যে এই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য নিজেকে প্রমাণ করেছে
• আদালত এবং বিচারকরা ন্যায্য পদ্ধতির মান অনুযায়ী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে কীভাবে কাজ করতে পারেন, উদাহরণস্বরূপ ইউরোপীয় কনভেনশন এর 6no. অনুচ্ছেদ যা মানবাধিকার সম্পর্কিত ?
• কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের সময় কি আর্টিকেল 6 এর মানদণ্ডে ঝুঁকি রয়েছে ?

ফলস্বরূপ, কাউন্সিল অফ ইউরোপ ন্যায়বিচার প্রশাসনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের জন্য নীতি নির্দেশিকা তৈরি করেছে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য কীভাবে আইনী তথ্যকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়, সেই সম্পর্কেও বলা আছে ।

আদালতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দরকারী করে তুলতে কী প্রয়োজন ?
কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতিমধ্যে অনুশীলনে নিজেকে প্রমাণ করেছে । এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি যেখানে রোবটরা বিচার করতে পারবে । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতিমধ্যে ব্যক্তি, মামলা-মোকদ্দমা এবং বিচারকদের তথ্য সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে। আইনী তথ্যের গ্রন্থাগার যেমন সমৃদ্ধ হয়, তেমনই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারে ।

বিশ্বস্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর জন্য নীতি নির্দেশিকা : নির্দেশিকা অনুসারে বিশ্বাসযোগ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হওয়া উচিত –

(১) আইনী - সমস্ত প্রযোজ্য আইন ও বিধিবিধানকে সম্মান করবে এমন ।

(২) নৈতিক - নৈতিক নীতি ও মূল্যবোধকে সম্মান করবে এমন ।

(৩) শ্রমসাধ্য - একটি প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক পরিবেশ বা নীতি মেনে চলে এমন ।

বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমগুলির যে প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করা উচিত :

• প্রযুক্তিগত বলিষ্ঠতা এবং সুরক্ষা,
• গোপনীয়তা এবং তথ্য পরিচালনা,
• স্বচ্ছতা,
• বৈচিত্র্য, বৈষম্য এবং ন্যায্যতা,
• সামাজিক ও পরিবেশগত কল্যাণ,
• দায়িত্ব;

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ন্যায়বিচার এবং বিচার ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ উত্থাপন করেছে । জুডিশিয়াল সিস্টেমস বা বিচার বিভাগ এবং তাদের পরিবেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সম্পর্কিত ইউরোপীয় নৈতিক সনদ (European Ethical Charter) নীতিগুলির একটি কাঠামো সরবরাহ করে যা নীতি নির্ধারক, আইনসভা এবং বিচার পেশাদারদের গাইড করতে পারে যখন তারা জাতীয় বিচার প্রক্রিয়াগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিকাশের জন্য নিযুক্ত হয় |

ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিচার :
ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ন্যায়বিচার হ'ল নির্দিষ্ট ধরণের বিশেষায়িত বিরোধের ফলাফলের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা প্রযুক্তির বিপুল পরিমাণ বিচার্য সিদ্ধান্তগুলির বিশ্লেষণ ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জড়িত হওয়া খুব সহায়ক হতে পারে :

• উন্নত কেস-ল অনুসন্ধান ইঞ্জিন উপলব্ধ করা ;
• অনলাইন বিরোধ নিষ্পত্তি (ODR);
• খসড়া কার্যসমূহে সহায়তা;
• বিভিন্ন রকমের বিশ্লেষণ ;
• বিভিন্ন মানদণ্ড অনুসারে চুক্তিগুলির শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং বিবিধ বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ চুক্তিযুক্ত ধারাগুলির সনাক্তকরণ;
• অভিযুক্তদের অবহিত করতে বা তাদের আইনি সহায়তা প্রদান করার জন্য "চ্যাটবটস"
• পরিষেবা সরবরাহের প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ এবং সাশ্রয়ী করে তুলতে ।
• কেবলমাত্র প্রাসঙ্গিক ডেটা সংগ্রহ করে বিচারকদের কাছে উপলব্ধ করা ।

ফ্রান্সের বিচার মন্ত্রকের উদ্যোগে 2017 সালে পরিচালিত দুটি আদালতে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিচার সফ্টওয়্যার পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়েছে |

 
অপরাধমূলক বিষয়ে "পূর্বাভাস" এর ব্যর্থতা :

আমেরিকাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কৃষ্ণ জনগোষ্ঠীকে প্রায়শই উচ্চ ঝুঁকি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল, যদিও তারা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে তেমন অপরাধের সাথে জরায়নি | অন্যদিকে সাদা জনগোষ্ঠী, যারা কম ঝুঁকি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ হয়েছিল, তারা পরের দুই বছরের মধ্যে অপরাধ সংঘটিত করেছিল । এভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অ্যালগরিদম কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য পুনঃসংশ্লিষ্টতার ঝুঁকিকে অতিরঞ্জিত করেছিল এবং সাদা জনগোষ্ঠীকে অবমূল্যায়ন করেছিল ।

ভারতবর্ষের বিচারব্যবস্থায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার:

উপরোক্ত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে কয়েকদিন আগে ভারতবর্ষে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গেল যখন ভারতের মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি S A Bobde ভারতীয় বিচার বিভাগের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত গবেষণা পোর্টাল (Supreme Court Portal for Assistance in Court’s Efficiency) SUPACE চালু করলেন । SUPACE হল আদালতের দক্ষতায় সহায়তার জন্য সুপ্রীম কোর্ট পোর্টাল (Supreme Court Portal for Assistance in Court’s Efficiency)

এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং আইন সম্বন্ধীয় তথ্য সংগ্রহ করে এবং এগুলিকে বিচারকের কাছে উপলব্ধ করে । এটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নয়, কেবল তথ্য প্রক্রিয়া করার জন্য এবং সিদ্ধান্তের জন্য কোনও ইনপুট সন্ধানকারী বিচারকদের কাছে এগুলি সরবরাহ করার জন্য। এটি বিচারকদের পক্ষে গবেষণা আরও সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে তাদের কাজের চাপ সহজ হয় । এটির দ্বারা সময় সাশ্রয় হবে । এটি বিচার বিভাগ এবং আদালতকে বিলম্ব এবং মামলার দেরি কমাতে সহায়তা করবে । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মৌলিক অধিকারের ন্যায়বিচার উপলব্ধির ক্ষেত্রে আরও সুশৃঙ্খল, কার্যকরী, ব্যয় এবং সময়সীমাবদ্ধ উপায় উপস্থাপন করবে। এপ্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য জাতীয় জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিডের (NJDG) প্রকাশিত তথ্য অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা আদালতে ৩.৮১ কোটি মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে । এতে 1 লক্ষেরও বেশি মামলা 30 বছরেরও বেশি পুরানো |

ভারতের মহামান্য প্রধান বিচারপতি S A Bobde কথায় যে সিস্টেমটি চালু হচ্ছে তা বিচারকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নয়, বরং সমস্ত তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল যাতে বিচারক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ।

এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যা আমাদের আগামী দিনে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে :

i বেকারত্ব বা নির্দিষ্ট কিছু পদে অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত উদ্বেগ |

ii এই ব্যবস্থা অবলম্বন করা হলে বেকারত্বের বৃদ্ধি পাবে ।

iii বহুমূল্য বিচারকের রায় এর ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনোই পথের কাটা হতে পারে না ।

বিশ্বজুড়ে বিচার ব্যবস্থাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের জন্য আরও নৈতিক প্রশ্ন তৈরি করছে । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্ভবত মামলার মূল্যায়ন করতে পারে এবং বিচারকের চেয়ে আরও ভাল, দ্রুত এবং আরও দক্ষ উপায়ে বিচার প্রয়োগ করতে পারে - এইরকম চিন্তাভাবনা কিছু লোকের মনেই এসেছে |

আইনজীবি ও প্রশাসনিক পাবলিক সংস্থাগুলির সিদ্ধান্ত গ্রহণে, আইনী পেশা এবং বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, আইনজীবীরা, তাদের ক্লায়েন্ট/মক্কেল এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের সুবিধার সাথে কাউন্সেলিং এবং মামলা-মোকদ্দমা উভয় ক্ষেত্রেই আইনজীবীদের দক্ষতা এবং নির্ভুলতা বাড়াতে পারেন ।

তবে অনেক নৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে –

• AI সরঞ্জামগুলির স্বচ্ছতার অভাব: AI এর সিদ্ধান্ত সর্বদা মানুষের কাছে বোধগম্য নয়।
• AI নিরপেক্ষ নয়: এআই-ভিত্তিক সিদ্ধান্তগুলি অনর্থক, বৈষম্যমূলক বা পক্ষপাত দুষ্ট হতে পারে।
• আদালতে ব্যবহৃত তথ্যগুলি অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের চরম গোপনীয় তথ্য হয় তাই সেগুলোর গোপনীয়তা বজায় রাখা |
• মানবাধিকার এবং অন্যান্য মৌলিক মূল্যবোধগুলির বা ন্যায্যতা বজায় রাখা |

পরিশেষে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আমাদের প্রত্যেকের মনেই থেকে গেল এবং তা হল এমন কোন দিন কি আসবে যখন আমাদের মহামান্য আদালতের মহামূল্যবান রায়গুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা রোবট দ্বারা চালিত হবে | যার উত্তর কেবল সময় দিতে পারবে !