Landmark judgement on Electronic Evidence Law in Bengali | ভারতীয় প্রমাণ আইনের 65বি ধারা | সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়।


বৈদ্যুতিন প্রমাণের উপর ঐতিহাসিক রায়: ভারতীয় প্রমাণ আইনের 65বি ধারার শংসাপত্র বাধ্যতামূলক কিনা? ভারতের মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়।

ভারত বর্ষ পৃথিবীর অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ | আজকের যুগে প্রায় বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য ছাড়া কোন কিছু প্রমাণ করা খুব কঠিন| এই অবস্থায় প্রতিটি মানুষের প্রতিটি কাজ কর্মের একটা করে রেকর্ড /প্রতিলিপি তার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক কার্যকলাপের মধ্যে রেকর্ডভুক্ত হয়ে থাকে |যেমন ধরুন একজন মহিলা স্বামীর ফেসবুক প্রোফাইলে বিভিন্ন মহিলার সঙ্গে স্বামীর অন্তরঙ্গ ছবি বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তার স্বামীর সঙ্গে অন্য মহিলাদের অন্তরঙ্গ ছবি পেলেন এবং তিনি তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করতে চাইছেন এবং এই জায়গায় দাঁড়িয়ে ওই বিভিন্ন মিডিয়াতে সেই বিভিন্ন ছবি গুলো তার ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করতে পারে এই অবস্থায় ওই বিভিন্ন পোস্ট গুলোর স্ক্রীনশট আদালতে কিভাবে আনতে হবে যাতে মহামান্য আদালত ইলেকট্রনিক্স স্ক্রিনশটগুলো কে নির্ভর করে বিচারের রায় দিতে পারেন |


আজকে বিভিন্ন রকমের মামলায় ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যের ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে এবং আগামী দিনে আরও অনেক অনেক বেশি প্রয়োগ হবে | ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য যদি ঠিকমতো আদালতে প্রমাণ করা যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে এর থেকে ভালো সাক্ষ্য আর কিছুই হতে পারে না কারণ অনেক ক্ষেত্রে অনেক মামলায় এরকম অভিযোগ ওঠে যে সাক্ষীকে কেনাবেচা করা হয়েছে বা সাক্ষী মিথ্যে কথা বলেছে বা বলছে | এরকম হামেসা আমরা শুনতে পাই কিন্তু ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য কে প্রভাবিত করা কঠিন কাজ সে ক্ষেত্রে প্রভাবিত করলে প্রভাবিত করার কারণ এবং প্রভাবিত হবার পদ্ধতি ধরা পড়ে যায় |আবার অনেক ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কোনো সাক্ষ্য থাকেই না যেমন কোন একটা খুনের ঘটনায় দেখা যায় সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য সিসিটিভি ক্যামেরার সিসিটিভি ফুটেজ হয় | সেক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরার সিসিটিভি ফুটেজ খুনের রহস্য সমাধান করতে এবং প্রকৃত বিচার পর্বের জন্য একান্ত আবশ্যক |এই অবস্থায় ইলেকট্রনিক এভিডেন্স যেহেতু সত্যি কে প্রমাণ করার পক্ষে বা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আজকের সমাজ ব্যবস্থায় খুবই কার্যকরী সেই হেতু ইলেক্ট্রনিক সাক্ষ্য মহামান্য আদালতের কাছে কিভাবে প্রমাণ করতে হবে তাই নিয়ে ভারতবর্ষের সাক্ষ্য আইনে 2000 সালে নতুন ধারা 65B নিয়ে আসা হয় এবং বলা হয় যে ইলেক্ট্রনিক সাক্ষ্য ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের ধারা 65বি-এর সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে দাখিল করতে হবে |


এক্ষেত্রে আমাদের মহামান্য আদালত পার্লামেন্ট অ্যাটাক মামলায় ইলেক্ট্রনিক সাক্ষ্যের সাথে প্রত্যায়ন সার্টিফিকেট দিতেই হবে একথা বলেননি কিন্তু 2014 সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বশির মামলায় (Anvar P.V. v. P.K. Basheer & Ors ) ইলেক্ট্রনিক সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক বলে রায় দেন |এরপরে 65B সার্টিফিকেট নিয়ে অনেক বিভিন্ন রকমের বাদানুবাদের পর 2018 সালে সাফি মোহাম্মদ (Shafhi Mohammad v. State of Himachal Pradesh) মামলায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে 65B সার্টিফিকেট ইলেক্ট্রনিক সাক্ষ্যের সঙ্গে দিতেই হবে এটা সব জায়গায় বাধ্যতামূলক নয় | এই রায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী রায় বশির মামলায় রায়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধী বা পরিপন্থী হয় | এই অবস্থায় এই দুটো মামলার রায় কে আরো বিচার করে প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের উচ্চতর আদালতে এই বিষয়টা পাঠানো হয় | এবং দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমরা অর্জুন পন্ডিত রাও (Arjun Panditrao Khotkar Versus Kailash Kushanrao Gorantyal And Ors) মামলায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট আগের সমস্ত বাদানুবাদের মীমাংসা করেন এবং এক ঐতিহাসিক রায় দেন যা আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত | সংক্ষেপে এই রায় সম্বন্ধে বলতে গেলে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানতে পারি :


বশির মামলায় রায় শাফী মুহাম্মদ মামলার রায় কে নস্যাৎ করে দেয় এবং 65B সার্টিফিকেট এর ক্ষেত্রে বশির মামলার রায় বহাল থাকে |


যেখানে কোন বাদী- বা বিবাদী তার কোন ইলেক্ট্রনিক সাক্ষ্য প্রমাণ করার জন্য যে ডিভাইস যেমন মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদিতে প্রথমবার ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সঞ্চয় করে রেখেছেন, সাক্ষ্য দানের সময় সে যদি ওই ডিভাইস নিয়ে উপস্থিত হয় যাতে ওই ইলেকট্রনিক তথ্য প্রথমবার রাখা হয়েছে তাহলে সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে তার ডিভাইসে থাকা ইলেকট্রনিক তথ্য প্রমাণ করার জন্য ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের 65B ধারার কোন সার্টিফিকেট দিতে হবে না |


কিন্তু যদি ডিভাইস এমন হয় যে তাকে আদালতে নিয়ে আসা বা বহন করে আনা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক্স সাক্ষ্যের সাথে ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের 65B ধারা মতে সার্টিফিকেট দেওয়া বাধ্যতামূলক |


ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার উপর এই মামলায় একটি নির্দেশ দেওয়া হয় যে যখন কোন ফৌজদারি মামলায় তারা সিডিআর বা অন্য কোন তথ্য প্রদান করবে তবে সে ক্ষেত্রে এই কোম্পানিদের ইলেকট্রনিক তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে হবে কারণ মামলার বিচার চলাকালীন যেমন বিরোধীপক্ষের সাক্ষ্যের সময় যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তারা ঐ সিডিআর বা অন্য কোন তথ্য প্রদান করবে মহামান্য আদালতে, বিচার পর্ব সঠিকভাবে করার জন্য |


এছাড়া মহামান্য প্রধান বিচারপতি নির্দেশে ইলেকট্রনিক সাক্ষ্যের যে ড্রাফ্ট রুলের কথা বলা হয়েছে সেটা নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করে কোটের বিচারকার্যে ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য কিভাবে নিয়ে আসা হবে তার উপরে প্রকৃত নিয়মাবলী প্রণয়নের কথা এই মামলার রায়ে বলা হয়েছে |


যেহেতু ইলেকট্রনিক সাক্ষ্য নিয়ে কাজ করা পৃথিবীজুড়ে সমস্ত বিচার বিভাগের কাছে একটা নতুন ঘটনা এবং নতুন চ্যালেঞ্জ তাই এই মামলার রায় বিভিন্ন দিক থেকে একটা যুগান্তকারী রায় যা আগামী দিনে আমাদের বিভিন্ন বিচার পদ্ধতি, তদন্তকারী অফিসারদের তদন্ত এবং সমস্ত দেশের পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং সেই কারণে এই মামলার রায় একটি যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক রায়, বিশেষ করে প্রতিনিয়ত বেড়ে যাওয়া সাইবার অপরাধের তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক তথ্য অন্যতম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে কাজ দেয় |


মহামান্য উচ্চতম আদালতের সম্পূর্ণ রায়

Comments

Popular posts from this blog

65B Certificate Format | Certificate u/s 65B Indian evidence act

Whether Certificate u/s 65B of Indian Evidence Act mandatory? Latest Judgement on Electronic Evidence Law In India